30/09/2024

SkbTv Channel Bangla News

ডাক বিভাগের দুর্নীতি: ভদ্রের’ ই-পোস্ট প্রকল্পে জলে গেল ৫৪০ কোটি টাকা!

Spread the love

সুশান্ত সিনহা:

ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার জালালচর তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর ডাকঘর বা ই-সেন্টার। দূর থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই এটি কোন ডাকঘর। টিনের তৈরি ঘরটিতে দীর্ঘদিন কারও আনাগোনা না থাকায় এখন অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে মেঝের মাটি

ঘরটি থেকে অনেক আগেই উধাও হয়ে গেছে দরজা-জানালা। টিনের চাল কোন রকম থাকলেও ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, উপরের সিলিং অর্ধেকটা ঝুলে পড়ে আছে; নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। সেখানে এখন বাসা বেঁধেছে মাকড়সার দল। আর দিনের বেলা দেখা মেলে হাঁস-মুরগির বিচরণ। ডাক বিভাগ সাড়ে আট হাজার গ্রামে প্রযুক্তি নির্ভর পোস্ট অফিস স্থাপনের যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, এটি তার একটি।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই সেন্টারের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে তিনটি ল্যাপটপ, তিনটি কি বোর্ড, একটি ফটো প্রিন্টার, টেলিটকের মডেম ও সিমকার্ড, হেড ফোন, পাওয়ার এক্সটেন বোর্ডসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার কম্পিউটার সামগ্রী।

আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা কালীগঙ্গা নদীর ওপারে কলাকোপা বাজারের ই-পোস্ট অফিসের। জালালচর থেকে নদী পার হয়ে কলাকোপার পুরাতন বাজারে গিয়ে ই-পোস্ট অফিস তো দূরে থাক, কোন পোস্ট অফিসের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া গেল না। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেল, এখানে পোস্ট অফিস নামেই আছে, কাজে নেই!

অথচ, কাগজেপত্রে ওই পোস্ট অফিসের জন্য তিনটি ল্যাপটপ, কার্ড দিয়ে লেনদেনের পজ মেশিন, স্ক্যানার, প্রিন্টারসহ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি!

নবাবগঞ্জের কোলাকোপার পাশে গোবিন্দপুর ই-পোস্ট অফিস। এখানে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রয়েছে আধাপাকা ভবন। দূর থেকে দেখে এখানে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। কিন্তু কাছে যেতেই বারান্দায় থাকা পোস্টবক্সের জীর্ন দশা দেখে অনুমান করা গেল, কেমন চলছে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর এই পোস্ট অফিসটির কার্যক্রম। জানা গেল, সব কাজ চলে ক্লাব ঘরে। আর চুরির ভয়ে প্যাকেট না খুলেই, আলমারি বন্দি করে রাখা হয়েছে বরাদ্দ পাওয়া কম্পিউটার সামগ্রী।

চুরির ভয়ের পাশাপাশি এসব সামগ্রী পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকের অভাবকে দায়ী করলেন পোস্ট অফিসের দায়িত্বরত ব্যক্তি। তিনি বলেন, কম্পিউটার চালানোর কোন প্রশিক্ষণ আমাদের নেই। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়নি। শুধু কম্পিউটারসহ যাবতীয় সামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পাশের পাড়াগ্রাম বাজার ই-পোস্ট অফিসটি দালান ঘরে। আমাদের আসার খোঁজ পেয়ে স্থানীয় রানার এসে তালা খুললেন। জানা গেল, বহুল আলোচিত ই-পোস্ট অফিস প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা। শুরু থেকে নষ্ট ল্যাপটপ কোনমতে চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এরমধ্যে দুটি ল্যাপটপ মেরামত করতে দিয়েছেন, আর একটিতে কোনোরকম কাজ করছেন।

একই এলাকার মাশাইল ই-পোস্ট অফিসের দরজা-জানালা খোলা হয় না বহুদিন। ১০ লাখ টাকার কম্পিউটার সামগ্রী দেয়ার পর দক্ষ জনবল না থাকায় তা আবার ফেরত নেয়া হয়েছে। স্থানীয় পোস্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা একজন জানালেন, শুধু কম্পিউটার সামগ্রীই দেয়া হয়েছিল, কিন্তু কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। ফলে তা পরিচালনা করতে না পারায় এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ না দেয়ায় এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই ১০ লাখ টাকার কম্পিউটার সামগ্রী ফেরত দেয়া হয়েছে।

এই যখন অবস্থা, তখন ডাক বিভাগের মহাপরিচালক এসএস ভদ্রের বাস্তবায়ন করা ৫৪০ কোটি টাকার ই-পোস্ট অফিস প্রকল্পে কতটা দুর্নীতি আর অনিয়ম হয়েছে তা বুঝতে কষ্ট হয় না। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে ভদ্রের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে ই- সেন্টার প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোস্তাক আহমেদ এমন অবস্থাকে খুব একটা আমলে নিতে চাইলেন না। তিনি বলেন, সারা দেশের চিত্র তো এক রকম না। হয়ত ঢাকা ও তার আশপাশের কিছু পোস্ট অফিসে কাজ একটু কম হচ্ছে। তা দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

About The Author


Spread the love