বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
তবে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়ার সময় আসেনি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সংক্রমণের এখনকার ধারাকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের লক্ষণ বলছেন তারা।
আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে দুজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি ৫ শতাংশের নিচে অন্তত কয়েক সপ্তাহ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়। এর ওপর ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ধারা হয় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাংলাদেশে করোনার ব্রিটিশ কিংবা আফ্রিকার ধরনের (স্ট্রেইন) কারণে যদি সংক্রমণ বাড়তে থাকে, তা হলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যাবে। আর যদি বাংলাদেশে সংক্রমণের যে ধরন আগে ছিল সেটিই থাকে, তাতে হয়তো পরিস্থিতি মারাত্মক হবে না। তাই আরও কিছু দিন পর্যবেক্ষণ করলে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের শঙ্কা দেখছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম। গতকাল রবিবার ঢাকার শ্যামলীর টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ। আক্রান্তদের অনেককেই আইসিইউতে ভর্তি করা লাগছে।’ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. খুরশীদ বলেন, সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সারাদেশে প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে আইসিইউগুলো।
সরকারের মাঠ প্রশাসনকেও সংক্রমণ রোধে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ১৩ মার্চ এক চিঠিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের নানা শঙ্কার মধ্যে গত আড়াই মাসের মধ্যে গতকাল সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেশ কয়েক সপ্তাহ পর ৯ মার্চ সংক্রমণ আবার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গত শুক্র ও শনিবার দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ৬ শতাংশের বেশি। গতকাল তা বেড়ে ৭.১৫ শতাংশ হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারায় গত এক সপ্তাহে দেশে নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে ৬৭.২৭ শতাংশ, আর মৃত্যু বেড়েছে ৪৯.০২ শতাংশ।
গতকাল অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের দিন সকাল ৮টা থেকে থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও এক হাজার ১৫৯ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মারা গেছেন ১৮ জন। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১২ পুরুষ আর ৬ নারী। শনাক্তের এই সংখ্যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আর মৃত্যু গত সাত সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জন আর মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৫৪৫ জন। এ সময়ে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক হাজার ৩৮৫ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৬৯৫ জন হয়েছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ৪১তম অবস্থানে।
সংক্রমণের এ ধারাকে দ্বিতীয় ধারার লক্ষণ বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, ‘এখনই একে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বলা যাবে না। তবে এটি দ্বিতীয় ঢেউয়ের লক্ষণ বলা যেতে পারে। তাই এখনই যদি সংক্রমণ রোধে ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তা হলে পরিস্থিতি দ্বিতীয় ঢেউয়ের দিকে যাবে।’ আরেক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে নতুন কোনো ধরন (স্ট্রেইন) প্রবেশের কারণে এ সংক্রমণ বাড়ছে কিনা দেখতে হবে। নতুন পরিস্থিতি আরও কয়েক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তার পর বলা যাবে, দেশ দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে কিনা।’
এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন এক হাজার ২৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। আর এর আগে ২৪ জানুয়ারি ২০ জনের মৃত্যুর খবর আসে। দৈনিক শনাক্তের হারও ৪ জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো ৭ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। গত একদিনে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৭.১৫ শতাংশ ছিল বলে অধিদপ্তর জানিয়েছে।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে- গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ২১৯টি ল্যাবে ১৬ হাজার ৫২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫১টি নমুনা।
More Stories
২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
মৃত্যু বেড়ে ১০৭ দেশে বন্যায়