ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ টানা ১৪ ঘণ্টা ধরে অচল করে রেখেছেন হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
হরতাল ডাকার পর আজ রোববার ভোরে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেন সংগঠনটির কর্মীরা। দিনভর ১৩টি গাড়িতে আগুন দেন তাঁরা, ভাঙচুর করেন আরও অন্তত ৫০টি। পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সংঘর্ষও বাধে তাঁদের। একাধিকবার গুলিও ছুড়তে দেখা যায় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের। দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। এর মধ্যেও রাত সাড়ে ৮টা নাগাদও হেফাজতের কর্মীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে ছিলেন।
দিনভর সংঘাতের বিষয়টি স্বীকার করলেও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলছেন, পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে
মোহাম্মদ জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত) বিভিন্ন জায়গায় টায়ারে আগুন জ্বালায় দুষ্কৃতকারীরা। যানবাহন যাতে চলাচল না করতে পারে, সে জন্য সড়কে বিদ্যুতের খুঁটিও ফেলে রাখে। কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়, ভাঙচুরও করে। ‘তবে হেফাজতের কর্মীরা এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন, দুষ্কৃতকারীরা মহাসড়কে যানবাহনে আগুন দিয়েছে,’ বলেন তিনি।
মহাসড়কের ওই অংশ বন্ধ থাকলেও যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা হয়ে চলাচল করা যাচ্ছে। তবে ওই সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল খুব কম।ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা মহানগরের কোনো সমস্যা না থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হরতাল সমর্থক হেফাজতের কর্মীরা তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছেন। গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। পরিস্থিতি উন্নতি না হলে দূরপাল্লার যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারত সফরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সংঘাতে প্রাণহানির পর রোববার সারা দেশে হরতাল ডাকে হেফাজতে ইসলাম।পুলিশ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেফাজতের হরতাল সমর্থকেরা ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের (মৌচাক এলাকায়) প্রথম টায়ারে আগুন ধরিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এরপর সানারপাড়, শিমরাইল ও সাইন বোর্ডে সড়কে টায়ারে আগুন ধরান তাঁরা।
সকাল ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা হরতালকারীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন। তবে তাঁরা সড়ক ছাড়েননি। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সানারপাড়ে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষ শুরু হয়, সেখানে গোলাগুলিও হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৬টার পর থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় যখনই কোনো যানবাহন ঢুকেছে, তখনই সেই বাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের তথ্য বলছে, অন্তত সাতটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা। তবে সরেজমিন এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের তথ্যমতে, দুটি ট্রাকসহ কমপক্ষে ১৩টি গাড়িতে আগুন ধরানো হয়।
সকাল থেকে পরিস্থিতি দেখে আসা সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সড়কে আছে। তারপরও গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি আতঙ্কিত।
হরতালকারীদের ঠেকাতে মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক বিজিবি সদস্য দেখা গেছে। রয়েছেন র্যাবের সদস্যরাও। পুলিশের সাঁজোয়া যানের পাশাপাশি বিজিবিরও অন্তত পাঁচটি সাঁজোয়া যান দেখা গেছে টহলে।
তবে রাত সাড়ে ৮টার সময়ও মাঠে ছিলেন হরতাল সমর্থকেরা, যদিও হরতাল শেষে কেন্দ্রীয়ভাবেনতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা জাহেদ পারভেজ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কের দুই পাশের ছোট ছোট সড়কে বিপুলসংখ্যক দুষ্কৃতকারী দেখা গেছে।
More Stories
২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
মৃত্যু বেড়ে ১০৭ দেশে বন্যায়