হেফাজতের হরতালের আগুনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আছে শুধু পোড়া চিহ্ন আর গন্ধ। সোমবার দিনভর সেসব ধ্বংসস্তূপ সরিয়েছেন পুলিশের সদস্যরা। ওই হামলাকারীদের মধ্যে ছিল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও কিশোর। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত দুজনের একজন শিশু। আহতদের মধ্যেও কয়েকটি শিশু রয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানায়, গত রোববার হরতাল চলাকালে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হরতাল সমর্থক কয়েক হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ (১০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে) প্রথমে থানার পাশে রাখা সাঁজোয়া গাড়িতে (এপিসি) হামলা চালিয়ে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে হামলাকারীরা থানার সরকারি দুটি পিকআপ ভ্যান ও ২০ টনি একটি রেকার পুড়িয়ে দেয়। থানার সামনে বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে রাখা দুটি লেগুনা, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও ১০/১২টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। পরে ভাড়া ভবনে থাকা থানা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে হামলাকারীরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে গতকাল রোববার হেফাজতের ডাকা এ হরতালে এভাবে থানাটিতে চড়াও হয় আশপাশের সহস্রাধিক শিশু-কিশোর-তরুণ। একপর্যায়ে তারা থানায় আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে পুড়ে যায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, পুলিশ সদস্যদের পোশাক, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, দুটি পিকআপ ভ্যান, পাঁচটি অস্ত্রসহ প্রায় সবকিছুই। এখন এক কাপড়ে রয়েছেন ওই থানার পুলিশের সদস্যরা। সরাইল থানার পুলিশের সহায়তায় হাইওয়ে থানার ৩৪ জন সদস্য সাদাপোশাকে শুধু অস্ত্র নিয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরে সরাইল থানায় আশ্রয় নেন। রোববার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএনের সহায়তায় খাটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। তবে থানার সব সদস্য রাত কাটান কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানায়।
খাটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমারা থানা রক্ষা করতে অনেক চেষ্টা করেছি। এর জন্য সাড়ে চার শতাধিক ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে। তার পরও রক্ষা করা যায়নি। আমরা অস্ত্র নিয়ে এক কাপড়ে বের হয়ে গেছি। এখানে অফিস করার মতো আর কোনো অবস্থা নেই।
ওই হামলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিহাতা গ্রামের আলতাফ আলী ওরফে আলতু মিয়ার ছেলে হাদিস মিয়া ওরফে কালন মিয়া (২৩) সরাইল উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের সুফি আলীর ছেলে আল আমীন (১২)। গুলিতে আহত পৃথম মিয়া (২৩), গেলমান মোতাইদ (১০), সাইমন মিয়া (১০), মাসুম মিয়া (২৩) আলম মিয়া (৩২) ইমন মিয়া (১৭) ও আরমান মিয়াকে (২০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে হাইওয় থানা পরিদর্শন করেছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজিপি) মল্লিক ফখরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমান, সিলেট অঞ্চলের পুলিশ সুপার শহীদ উল্লাহ প্রমুখ। এর আগে সকালে ওই থানা পরিদর্শন করেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান প্রমুখ।
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের বিষয়গুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একাধিক মামলা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
More Stories
২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
মৃত্যু বেড়ে ১০৭ দেশে বন্যায়