গত কয়েকদিন যাবত ভারত, থাইল্যান্ড সহ এশিয়ার অনেক দেশেই প্রতিদিনই প্রায় করোনায় আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে। রোগিদের জায়গা দিতে পারছে না স্থানীয় হাসপাতাল গুলো। এছাড়াও ভ্যাকসিন সল্পতার রয়েছে এশিয়ার অধিকাংশ দেশ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক দিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ভারতের অবস্থান। করোনার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তালিকা অনুসারে করোনায় সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলকে টপকে গেছে ভারত।
প্রথমবারের মতো ভারতে একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ পেরিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২ লাখ ৭৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছরের শুরুর দিকে ভারতে করোনার সংক্রমণ ঘটার পর প্রথমবারের মতো এমন ভয়াবহ মাইলফলক স্পর্শ করলো দেশটি। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একইসময়ে মারা গেছেন এক হাজার ৩৮ জন মানুষ। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক লাখ ৭৩ হাজার ১২৩ জন। ভারতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ। লকডাউন ফিরে এসেছে দেশটির বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মুম্বাইয়ে। অন্যদিকে, স্থানীয় গণমাধ্যমের সংবাদে শোনা যাচ্ছে হাসপাতালগুলোয় শয্যা ও অক্সিজেন সরবরাহ সঙ্কটের কথাও।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপুল চাপের মুখে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও শোনা গেছে হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের খবর।
সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫২২ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩৯ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১১ কোটি ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৫৯২ জন।
বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হওয়া মোট ব্যক্তিদের ১১ শতাংশই দক্ষিণ এশিয়ায়। আর করোনায় যত লোকের মৃত্যু হয়েছে, তার প্রায় ৬ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এ অঞ্চলে। ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক দেশে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানা গেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় মোট আক্রান্ত মানুষের ৮৪ শতাংশই ভারতে। ভারতে গতকাল সোমবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ডসংখ্যক করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এদিন শনাক্তের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। মারা গেছেন ৮৩৯ জন। টানা পাঁচ দিন ধরে দেশটিতে রোগী শনাক্তের সংখ্যা লাখের ওপরে।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তালিকা অনুসারে সংক্রমণের দিক দিয়ে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
ভ্যাকসিন স্বল্পতা:
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলেছে। এনিয়ে গত বুধবার জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-হু’র প্রধান উন্নত দেশের টিকা আবিষ্কারক কোম্পানিগুলোর প্রতি উন্নয়নশীল দেশে প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন।
উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের ব্যবধান সহজেই চোখে পড়ছে টিকাদানের হারে নজর দিলে, যেমন; থাইল্যান্ড তার মোট জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশকে টিকা দিতে পেরেছে। অথচ আঞ্চলিক ধনী দেশ সিঙ্গাপুরের ১৪.৬ শতাংশ নাগরিক টিকা পেয়েছেন, বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের নিজস্ব ডেটাবেজ সূত্রে জানায়।
গেল মার্চে প্রথম আফ্রিকান নারী হিসেবে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেওয়া এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা সদস্য দেশগুলোর প্রতি ভ্যাকসিন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিলের পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং কাস্টমস বিধিমালা সহজ করার আহবান জানান। যদিও সেই আহবানে টিকা উৎপাদন কেন্দ্র থাকা দেশগুলো সেভাবে সাড়া দেয়নি।
সরবরাহ সঙ্কট এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ধনী দেশকেও ভোগান্তির শিকার করেছে। যেমন; একটি বড় চালান আসতে দেরি হওয়ায় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার উপর নতুন করে আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞার কারণে চলতি সপ্তাহেই মোট টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা বাতিল করেছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। দেশটির চিকিৎসকদের একটি জোট অবশ্য অবকাঠামো ও কর্মী সঙ্কটের কথা তুলে ধরে সরকারের ব্যাপক টিকাদানের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।
অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ওমর খোরশিদ স্থানীয় একটি বেতার চ্যানেলে বলেন, “বড় পরিসরে টিকাদানে অনেকগুলো কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সেখানে দরকার হবে বিপুল সংখ্যক নিবন্ধিত চিকিৎসক ও নার্সের। সরকার এ ব্যাপারটি আগেই চিন্তা করেননি বলে আমরা মনে করছি।
More Stories
২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
মৃত্যু বেড়ে ১০৭ দেশে বন্যায়