চলছে করোনার দ্বিতীয় মেয়াদের ‘কঠোর লকডাউন’। ১৩ দফা বিধি-নিষেধ থাকলেও তা যেন তোয়াক্কা করছে না বরিশালের মানুষ। বর্তমানে পুরো স্বাভাবিক বরিশালের লকডাউন। করোনা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারও।
যদিও এখনো থামছে না করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা। পাশাপাশি থেমে নেই আক্রান্তের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টা বরিশালে ২ জনের মৃত্যু ও ৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরবাসী। নগরীর চকবাজারে উপচেপড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি যেন কাগজে-কলমে।
রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক বেশি। যদিও বরিশালে পাবলিক পরিবহন বলতে অটোরিকশা ও মাহিন্দ্র। সেটা কোনো লকডাউনেই থেমে নেই। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফার সর্বাত্মক লকডাউনে বরিশালের চিত্র যেন স্বাভাবিক।
সোমবার সকাল থেকে বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সদর রোড, গির্জা মহল্লা, কাটপট্টি, চকবাজার, বাজার রোড, পোর্ট রোড, জেলখানার মোড়, নতুনবাজার, নথুল্লাবাজ, সিএন্ডবি রোড চৌমাথা, বটতলা চৌরাস্তা, বাংলাবাজার, রূপাতলী, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন এলাকার সব রাস্তায় সবধরনের যানবাহন চলতে দেখা গেছে। চেকপোস্ট আগের মতো থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যবেক্ষণ ছিল কিছুটা শিথিল।
পূর্বের তুলনায় সড়কে মোটরসাইকেল, ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা, রিকশার সংখ্যাও বেশি দেখা গেছে।
মূল সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতির পাশাপাশি অলিতেগলিতে দেখা যাচ্ছে মানুষের উপড়েপড়া ভিড়। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই, যে যার মতো বের হচ্ছে। যদিও এসব নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আর দেড় সপ্তাহ পর ঈদ। তাই করোনা বা লকডাউনে উপেক্ষা করে মানুষ ছুটছেন ঈদবাজারে। সরকার আবার কঠোরতায় যেতে পারে তাই ঈদবাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানুষ। বিশেষ করে নারীরাই বেশি ছুটছেন ঈদ শপিংয়ে।
নগরীর কাটপট্টি রোডে ঈদবাজার করতে আসা শাম্মী আক্তার বলেন, সামনে ঈদ তাই সবার জন্য ঈদবাজার করতে এসেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বাজারে এসেছি। কিন্তু এত মানুষের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে আসাটা উচিত হয়নি। আমি স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অন্যরা কেন যেন আনমনা।
চকবাজারের বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, সামনে ঈদ আসছে। এর মধ্যে লকডাউন। প্রায় এক বছর কোনো বেচা কেনা করা যায়নি। এভাবে চললে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
এদিকে বরিশাল বিভাগে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ জনের করোনা আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ২৬৭ জন।
সোমবার বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর ও শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মৃতদের মধ্যে বরিশাল জেলায় একজন ও ঝালকাঠিতে একজন রয়েছেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল জেলায় ২৩ জন, পটুয়াখালীতে ১৩ জন, ভোলায় ৯ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, বরগুনায় ৬ জন ও ঝালকাঠিতে ৮ জন। এ নিয়ে গত বছরের ১১ মার্চ থেকে চলতি বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত বিভাগে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬৭ জন।
এর মধ্যে শুধু বরিশাল জেলায় ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে বরিশাল বিভাগে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৬৬৮ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল জেলায় মোট নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ জন, এর মধ্যে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ জন রয়েছেন।
এদিকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মোট চিকিৎসাধীন আছেন ৭৮ জন, এর মধ্যে করোনা পজিটিভ ২৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট নমুনা জমা পড়েছে ১৯১টি। এর মধ্যে ৫৩টির নমুনা করোনা পজিটিভ হয়। পজিটিভের হার শতকরা ২৭ দশমিক ৭৪।
বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মানুওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, আজকের যে পরিস্থিতি তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষের আরও একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিল। সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত দাস বলেন, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা তৎপর রয়েছি। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানাচ্ছি। তাছাড়া আমরা অভিযান চালিয়ে জরিমানাও আদায় করছি। আজও বরিশালে দুইটি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে।
More Stories
২০ ডিসেম্বর থেকে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
মৃত্যু বেড়ে ১০৭ দেশে বন্যায়