23/12/2024

SkbTv Channel Bangla News

বিরল দেশ ভুটান, করোনায় মাত্র একজনের মৃত্যু

Spread the love

শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। শুরুতে চীনের উহানে যখন অজ্ঞাতনামা হিসেবে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে, মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গের মাধ্যমে প্রাণ কেড়ে নিতে থাকে, তখন এতটা ভয় ছিল না করোনা নিয়ে। পরবর্তী সময়ে এটি যখন প্রাণসংহারী রুদ্র রূপ ধারণ করে, তখন সাধারণ মানুষ তো বটেই, চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ, গবেষক—সবারই টনক নড়ে।

এত কিছুর পরে এদিকে এমত অবস্থাতে ভারতে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। বাংলাদেশ, পাকিস্তানেরও অবস্থা একই রকম। কিন্তু কোভিড মানচিত্রে অন্যতম বিরল দেশ ভুটান। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা একজন।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার আগ পর্যন্ত ভুটানে মাত্র একজনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২০২ জন। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৬৫ জন।

করোনার প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণ ঠেকাতে আগস্টে প্রথমবারের মতো ২১ দিনের লকডাউন শুরু কড়েছিলেন ভুটান। সেই সাথে লকডাউনের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরে শাকসবজি ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহ চালু ছিল। কঠোর নিয়ম মেনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভুটানের সাফল্য গোটা বিশ্বেই প্রশংসা কুড়িয়েছে।

কোভিড সংক্রমণ শুরুর সময়ে রাজধানী থিম্পুর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এক যুবকের একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু হয়। তারপর থেকে সেখানে একজনেরও করোনায় মৃত্যু হয়নি। দৈনিক সংক্রমণও আছে নিয়ন্ত্রণে। ভারতে যেখানে দৈনিক ৪ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে ভুটানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১১।

শুধু ভুটান নয়, পৃথিবীর একাধিক দেশ ভিয়েতনাম, রাওয়ান্ডা, সেনেগাল-অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে করোনা সংক্রমণকে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, জনস্বাস্থ্যে বিশেষ জোর দেওয়ার কারণেই এই দেশগুলোতে করোনা তেমন করে কামড় বসাতে পারেনি। ভুটানে রয়েছেন মোট ৩৩৭ জন চিকিৎসক, ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। তা-ও লড়াইয়ে প্রায় জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে ভুটান। কারণ প্রশাসনিক পরিকল্পনা।

২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর চীনে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ভুটান করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে ২০২০-র ১৫ জানুয়ারি থেকে। শুরু হয় লক্ষণের ভিত্তিতে পরীক্ষা। মার্চ মাসের ৬ তারিখে ভুটানে প্রথম আক্রান্তের খবর মেলে। তার ৬ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের মধ্যে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ৩০০ জনকে চিহ্নিত করে পরীক্ষা শুরু হয়। পাঠানা হয় নিভৃতবাসে। এমন পরিকল্পনাই অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে এই ছোট্ট দেশকে।

দেশের প্রধান অর্থনীতি পর্যটন হওয়া সত্ত্বেও গত বছরের মার্চ থেকে কড়া হাতে বিদেশিদের আগমন বন্ধ করে ভুটান। প্রায় সমস্ত জিম, রেস্তোরাঁ, শপিংমল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে করা হয় কড়াকড়ি। যারা বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তাদের জন্য সরকারি খরচে থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই যাতে সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যাওয়া যায়, তার ব্যবস্থাও করা হয়। ভুটানে চালু করা হয় ১৪ থেকে ২১ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম। যাতে সামান্যতম সংক্রমণেরও সম্ভাবনা না থাকে। বিপুল হারে পরীক্ষা শুরু করে ভুটান।

করোনাকালে যাদের উপার্জন কমেছে, তাদের ভিটামিন ট্যাবলেট-সহ ওষুধ, খাবার, পাঠানো থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয় ভুটানে। শুরু থেকেই প্রশাসন কড়া হাতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করায় এখনও করোনা থেকে অনেকটাই মুক্ত ভুটান।

উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম করোনা সংক্রমণ ঘটেছে ভুটানে।

About The Author


Spread the love