জকিগঞ্জে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র
দেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে গ্যাসপ্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জকিগঞ্জ পৌরশহরের আনন্দপুরে অনুসন্ধান কূপে সফলভাবে সৌভাগ্য শিখা জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় ডিএসটি (ড্রিল স্টিম টেস্ট) সৌভাগ্য শিখা প্রজ্বালন করা হয়। চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ শেষে গ্যাসপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হলে জকিগঞ্জ হবে দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র। তবে গ্যাসক্ষেত্রের বিষয়টি নিশ্চিত হতে আরও এক-দুই দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক কবীর আহমদ। জানা যায়, গত ৩-৪ বছর ধরে জকিগঞ্জ পৌরসভার আনন্দপুর এলাকায় নলকূপ বসাতে গেলে ভূগর্ভ থেকে গ্যাস বের হয়ে আসছিল। এ নিয়ে এলাকার লোকজনের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পেট্রোবাংলাকে অবগত করা হলে তারা অনুসন্ধানে নামে। প্রায় দুই বছর ধরে বাপেক্স গ্যাসপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে জকিগঞ্জে কাজ করছিল। মাটির নিচে গ্যাসের চাপ ও রিজার্ভ পরীক্ষা করতে গতকাল সকালে ডিএসটি সৌভাগ্য শিখা প্রজ্বালন করে বাপেক্স। এরপর বাপেক্সের বিশেষজ্ঞরা গ্যাসের মজুদের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হন। সূত্র জানায়, জকিগঞ্জের যে কূপটি নিয়ে বাপেক্স কাজ করছে সেটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই। আর ফ্লোটিং চাপ ১৩ হাজার পিসিআইর বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কূপের চারটি স্তর থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হতে পারে। তবে কূপটিতে কী পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। দেশে গ্যাসের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করে সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো। এর মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার হচ্ছে গ্যাসের আধার। এ দুই উপজেলায় বেশ কয়েকটি কূপ থেকে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস উত্তোলন করে আসছে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড। জকিগঞ্জে যে কূপে গ্যাসের অনুসন্ধান চলছে সেটির অবস্থান বিয়ানীবাজার থেকে ৩২ কিলোমিটার ও গোলাপগঞ্জ থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরে। সম্প্রতি একটি সেমিনারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান জকিগঞ্জের ওই ফিল্ড সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমরা নতুন একটি ফিল্ডে সফল হতে চলেছি। সেখানে কুপের প্রেসার ৬০ হাজার পিসিআইর অধিক রয়েছে। পরীক্ষা চলছে, এটি আমাদের জন্য দারুণ সুখবর হতে পারে। আশা করছি খুব শিগগিরই ভালো খবর দিতে পারব।’ তবে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘অনুসন্ধান চলছে। এখনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমরা ভালো কিছু আশা করছি। অনেক সময় পকেট রিজার্ভও থাকতে পারে। তাই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’ প্রকল্প পরিচালক কবীর আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘জকিগঞ্জে গ্যাস পাওয়া গেছে কি-না এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। শিখা জ্বালানো হয়েছে। এখন আমরা পর্যবেক্ষণে আছি। ওই কূপে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন করার মতো গ্যাস মজুদ আছে কি-না বা এটাকে গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে কি-না তা জানাতে আরও এক-দুই দিন সময় লাগবে।’ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ। এর বাইরে সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও প্রায় ৭ টিসিএফ। ১১৩টি কূপ থেকে প্রতি বছর উত্তোলিত হচ্ছে প্রায় ১ টিসিএফ গ্যাস। দেশীয় ও বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে।
More Stories
যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রির নামে প্রতারণা, তিনজন আটক I
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে গুরুতর জখম ছাত্র, থানায় মামলা