24/12/2024

SkbTv Channel Bangla News

আগের রাতে গুলশানের একটি ক্লাবে পরীমণির ভাঙচুর, থানায় জিডি

Spread the love

আগের রাতে গুলশানের একটি ক্লাবে পরীমণির ভাঙচুর, থানায় জিডি

ঢাকা বোট ক্লাবকান্ডের আগের রাতে অর্থাৎ ৭ জুন দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমণি জোর করে ঢুকে ভাঙচুর করেন। মদ চেয়ে না পেয়ে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে ১৫টি গ্লাস, ৯টি অ্যাশট্রে এবং বেশ কিছু প্লেট ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেন। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ভয়ভীতি দেখান ক্লাব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা গুলশান থানায় এ বিষয়ে একটি জিডিও (নোট আকারে) করেছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত অল কমিউনিটি ক্লাবের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ না দিলেও এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল। আলমগীর ইকবাল বলেন, প্রতিটি ক্লাবের একটি ড্রেস কোড থাকে। কোনো পুরুষ যদি আসেন, তখন তাকে কিছু ড্রেস কোড মেইনটেইন করতে হয়। তবে ওই রাতে পরীমণির সঙ্গে যে পুরুষ ব্যক্তি এসেছিলেন তিনি হাফপ্যান্ট, স্যান্ডেল এবং টি-শার্ট পরিহিত ছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল আপনি ড্রেস কোড লঙ্ঘন করেছেন। এভাবে ভিতরে যাওয়া যাবে না। কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনতে চাচ্ছিলেন না। রাত তখন বেশি হয়ে যাওয়ায় লোকজনও ছিল কম। ক্লাবের দুজন সদস্য তখন ছিলেন। পরীমণি ক্লাবের সদস্য নন। এর পরও অনেকটা জোর করেই ক্লাবে ঢুকতে চান। একজন সদস্যের রেফারেন্স নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ওই সদস্য তখন ছিলেন না। এ সময় পরীমণি তার পরিচিত ওই সদস্যের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন। সদস্য তাকে ফিরে চলে যাওয়ার অনুরোধ করে ফোন রেখে দেন। এরপরও পরীমণি মদ চাওয়ার পর না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ক্লাবের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও তিনজন সঙ্গী ছিলেন। তারাও পরদিন বোট ক্লাবে গিয়েছিলেন। এ বিষয়ে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত ৭ জুন গভীর রাতে ৯৯৯ এর একটি কলে গুলশান থানা-পুলিশের দুটি দল অল কমিউনিটি ক্লাবে যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কথা কাটাকাটির জেরে ক্লাবে গ্লাস ভাঙচুর করেছেন পরীমণি। পরে আর এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেননি। তবে আমাদের অফিসার থানায় নোট দিয়ে রেখেছেন। যদিও এখনো পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি। প্রয়োজন হলে আমরা (পুলিশ) ক্লাবে আবারও পরিদর্শনে যাব। সিসিটিভির ফুটেজে পরীমণির মাতাল অবস্থায় প্রবেশ ও বের হওয়ার ছবিও প্রকাশ পেয়েছে। এগুলো বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৭ জুন ১টা ৩৯ মিনিটে গুলশানে অল কমিউনিটি ক্লাবের সামনে গাড়ি থেকে নামেন পরীমণি। এরপর ব্লু- শার্ট পরা এক ছেলের হাত ধরে ক্লাবের গেটের দিকে আসেন। পেছন পেছন হাফপ্যান্ট পরা তার কস্টিউম ডিজাইনার ও আরেক নারীকেও আসতে দেখা যায়। ১টা ৪০ মিনিটে তারা চারজনই লিফটের সামনে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। ১টা ৪১ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে তার কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে একটা ফ্লাইং কিক করতেও দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর লিফট আসতে তারা চারজনই সেখানে উঠে পড়েন। ১টা ৪৩ মিনিটে লিফট থেকে বেরিয়ে ক্লাবের বারে প্রবেশ করেন। ২টা ১৪ মিনিটে দেখা যায়, বারের কাউন্টারের সামনে একে একে গ্লাস ভাঙতে থাকে। টানা ভাঙচুরের পর ২টা ৩৯ মিনিটে পরীমণি, জিমি আর সঙ্গে থাকা আরেক নারীসহ মোট তিনজন ক্লাব থেকে বেরিয়ে যান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরীমণি বলেন, ‘এটা ফালতু একটা অভিযোগ। এতদিন পরে কেন এই অভিযোগ?’ অন্যদিকে, গত ৮ জুন পরীমণি ঢাকা বোট ক্লাবে গেলে সেখানে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় গত সোমবার ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত এই নায়িকা। মামলার পর পুলিশ প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। জানা গেছে, পরীমণির মামলায় রিমান্ডে থাকা ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদসহ আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, সাভার থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণখানে অমির অফিসে অভিযান চালায়। এ সময় অমির দুই সহযোগী বাছির ও মশিউরকে আটকসহ জব্দ করে ১০২টি পাসপোর্ট। পরে পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বাছির ও মশিউর মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এ ছাড়া বিশেষ অনুমতি ছাড়া বেআইনিভাবে পাসপোর্ট রাখার দায়ে দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় অমি ও তার দুই সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে পরীমণির জিডি ও ডিবি অফিসে দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য। তবে অনেক বিষয়ের কোনো হিসাব নিকাশ মিলছে না। বনানী থানা পুলিশের কাছে দেওয়া জবানিতে এক কথা, ডিবির কাছে আরেক কথা এবং সংবাদ সম্মেলনে ভিন্ন কথা বলেছেন পরীমণি। জানা গেছে, পরীমণি সেই গভীর রাতে বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম জিমি, ঘনিষ্ঠজন অমি ছোট বোন বনিকে নিয়ে বের হন উত্তরার উদ্দেশে। কিন্তু সেখানে না গিয়ে ভিন্ন গাড়িতে করে পথ ঘুরে চলে যান সাভারের বিরুলিয়া এলাকার ঢাকা বোট ক্লাবে। বনানী থেকে উত্তরা যাওয়ার পথে কোনোভাবেই বোট ক্লাব পড়ে না। এই সময় তাদের সঙ্গে দুটি গাড়ি ছিল। তারপরও পরীমণি বলছেন, অমি দুই মিনিটের কাজ আছে বলে বোট ক্লাবে নিয়ে যান। উত্তরা থেকে দিয়াবাড়ীর সেই ক্লাবের দূরত্বও অনেক। এজাহারে পরী বলেছেন, রাত ১২টা ২০ মিনিটে তারা ক্লাবের সামনে গাড়ি থামান। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। তারপর নিরাপত্তারক্ষীরা দরজা খুলে দিলে অমি ভিতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে বলেন, ভিতরের পরিবেশ অনেক সুন্দর। তোমরা নামতে পার। পরীর ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকের কথা বলে ভিতরে প্রবেশ করেন। তারা নিচ তলার কোনো ওয়াশরুম ব্যবহার না করে দোতলার বারের পাশে ওয়াশরুমে যান বলে পরীমণি নিজেই পুলিশকে জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, নিচ তলার ওয়াশরুম ব্যবহার না করে কেন দোতলার বারের পাশে গেলেন বনি? আশপাশে আরও অনেক টয়লেট ছিল। ক্লাবের কর্মচারীরা বলছেন, চারজনই বেশামাল অবস্থায় ভিতরে প্রবেশ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, আগেই তারা মদ্যপান করে ক্লাবে গিয়েছিলেন। এই সময় পরীমণির ডিজাইনার জিমি ছিলেন হাফপ্যান্ট পরিহিত। ক্লাবের ড্রেস কোড অনুযায়ী এভাবে কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন না। ভিতরে প্রবেশ নিয়েও প্রশ্ন আছে। পুলিশ বের করার চেষ্টা করছে, পরী, জিমি, অমি, বনি একসঙ্গে প্রবেশ করেছেন। তাদের সামনে কী করে নাসির মাহমুদ একা পরীকে হেনস্তা করেছেন। আবার পরীর ঘনিষ্ঠ অমি কী করে সহায়তা করেছেন? এহাজারে পরী বলেছেন, ব্যবসায়ী নাসির মাহমুদ (৬৪) তাদের ডেকে বারের ভিতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি পান করার কথা বলেন। কিন্তু তিনি এতে সাড়া না দিলে জোর করে মদ পান করানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ তদন্ত করছে, পুরো ঘটনার। বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম মিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, বুধবার রাত ৩টায় পরীমণি তার সঙ্গে আরও দুজনকে নিয়ে থানায় আসেন। তারা সেখানে ২০ মিনিটের বেশি অবস্থান করেন। তখন পরী পুলিশের সামনে মাতালের মতো অস্বাভাবিক আচরণ করেন। পরে পুলিশ তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাকস্থলী ওয়াশ করতে পাঠায়। প্রশ্ন উঠেছে, মদ পান করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তার পেটে অ্যালকোহল গেল কী করে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরাও কীভাবে বেসামাল অবস্থায় ছিলেন? তবে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না নিয়ে চলে যান বাসায়। এরপর টানা চার দিন তিনি থানায় যাননি। ক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ড্রিংকের বোতল চাওয়া নিয়ে ক্লাবের স্টাফদের সঙ্গে তার বিতন্ডা হয়েছিল। এ সময় পরীমণি নাসিরের দিকে বোতল ছুড়ে মেরেছেন ক্লাবের কর্মচারীরা পুলিশকে জানিয়েছেন। পরীমণি আরও বলেছেন, বনি ওয়াশরুমে যাওয়ার পর নাসির মাহমুদ তাকে কফি খেতে বলেছেন। এদিকে, গতকাল অমির অফিসে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মামলার পরপরই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে বুধবার বোট ক্লাবে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ গণমাধ্যমে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, বোট ক্লাবে প্রবেশের সময় পরীমণি স্বাভাবিক ও সুস্থ থাকলেও বের হওয়ার সময় তিনি প্রায় অচেতন ও অসুস্থ ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, রাত ১২টা ২২ মিনিটের সময় ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে একটি কালো গাড়ি থামে। সেই গাড়িটির মালিক বোট ক্লাবের সদস্য তুহিন সিদ্দিকী অমি। গাড়ির সামনের দরজা থেকে নামেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। পেছনের ডান পাশের দরজা দিয়ে বের হন গ্রেফতার হওয়া অমি, পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ও তার বোন বনি। ক্লাবের বাইরের ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ক্লাবে ঢোকার সময় পরীমণি কালো টপস, জিন্সের প্যান্ট পরা ছিলেন। বনি লাল টপস, সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট এবং জিমি কালো হাতাকাটা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরা ছিলেন। অমির পরনে ছিল সাদা গেঞ্জি ও গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট। শুধু অমি ছাড়া বাকি সবাই মাস্ক পরে ক্লাবে প্রবেশ করেন। রিসিপশনের ক্যামেরায় তাদের চারজনকে একসঙ্গে বারে ঢুকতে দেখা যায়। তখন রিসিপশন ডেস্কে ছিলেন দুজন এবং ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরও একজন স্টাফ। দেড় ঘণ্টা পর পরীমণিকে অচেতন অবস্থায় কোলে করে দৌড়ে বের হতে দেখা যায় জিমি ও একজন নিরাপত্তা প্রহরীকে। পেছন পেছন আসেন অমিও। ক্লাবে অমির কালো গাড়িতে গেলেও পরীমণি ফিরেছেন সাদা রঙের একটি গাড়িতে। এ সময় অমি সাহায্য তো করেনইনি উল্টো শাসিয়েছেন সবাইকে। সেখান থেকে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে বনানী থানায় আসেন পরীমণি। ডিউটি অফিসারের রুমেও তাকে অসুস্থ দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পুলিশ গাড়িতে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় পরীমণিকে।
প্রসঙ্গত : গত সোমবার পরীমণির সাভার থানায় দায়ের করা মামলায় নাসির উদ্দিন ও অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া উত্তরার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেফতারের সময় মাদক উদ্ধার করা হয়। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অমি ও নাসিরকে মঙ্গলবার সাত দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে থাকা তিন নারীকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

About The Author


Spread the love