প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে তহশিলদারের এ কেমন দুর্নীতি!
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নে আছিমপুর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এলাকার তহশিলদার হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। যাদের জায়গা বা ঘর নেই তাদের তালিকা না করে যাদের আছে তাদের ঘর দিতে তালিকা তৈরি করছেন তিনি। ভুক্তভোগীরা এ অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের আছিমপুর গুচ্ছগ্রামে প্রধানমন্ত্রী উপহার ৬০ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি ঘরের কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) হাফিজ উদ্দিনকে। তিনি মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে লক্ষী রানী বিশ্বাস, তার ছেলে মদন বিশ্বাস, রুবিনা বেগম, সাজনা বেগম, রিজন মিয়া নামে কয়েকজন স্থানীয়কে ঘর বরাদ্দের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেন। অভিযোগ আছে, ধীরা বিশ্বাস নামে এক স্থানীয়ের ঘর থাকলেও মোটা অর্থ নিয়ে সরকারি ঘর পাওয়ার তালিকায় তার নাম অন্তর্ভূক্ত করেন তহশিলদার হাফিজ উদ্দিন।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নে হতদরিদ্র মুড়ি-চানাচুর বিক্রেতা এবং আরও কয়েকজনের নামও তালিকা থেকে বাদ দেন হাফিজ। যারা তাকে টাকা দিয়েছেন, শুধুমাত্র তাদের নাম তালিকায় রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রিপন চন্দ্র শীল ও ধীরাজ বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
তহশিলদার হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে উল্লেখ করাে হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী ঘোষণায় যাদের জায়গা নেই, বাড়ি নেই তাদেরকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার হবে। কিন্তু এই ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দুর্নীতি করেছেন তহশিলদার হাফিজ উদ্দিন। সৌদি প্রবাসীর ভাই-মেয়েসহ আরও কয়েকজন যাদের ঘর-বাড়ি আছে তাদের নাম তালিকায় রাখা হয়েছে।রানীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ড. ছরুল ইসলাম বলেন, তহশিলদারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে বখাটেদের বসিয়ে আড্ডা জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সামাদ মিয়া জানান, ঘরগুলোতে বখাটেদের আড্ডার পাশাপাশি আরও কিছু হয়। বাগমনা গ্রামের দুলন মিয়া জানান, তহশিলদার হাফিজ উদ্দিন এলাকায় গিয়ে যাচাই বাছাই করেননি। তিনি দালালদের সহযোগীতায় দুর্নীতি করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর পেতে আবেদনকারী রিপন চন্দ্র শীল জানান, তারা গত মার্চের ১৮ তারিখ ঘরে পেতে আবেদন করেন। আবেদন করার পর যাচাই বাচাই করা হয়েছে, তহশিলদার আমার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেননি। তিনি আনন্দ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে তার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করেছেন রিপন। একই অভিযোগ করেছেন ধীরাজ বিশ্বাস নামে এক হত দরিদ্র।
এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য তহলিশদার হাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে কল করা হলে রিসিভ করে তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যাচাই বাছাই তালিকা করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি আমি দেখছি।’
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসাক আলী এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের নাম তালিকা করে দিয়েছি। তহশিলদার তার মনগড়া তালিকায় টাকার বিনিময়ে করেছেন।’
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছু নেই। তালিকা নির্বাহী অফিসার ও চেয়ারম্যান করেছেন।’
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম রানা বলেন, ‘আমরা ভুমিহীনদের নামের তালিকা তহশিলদারকে দিয়েছি। সেগুলো যাচাই বাছাই করেন তওশিলদার। এখন শুনছি সঠিক ভুমিহীনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি তিনি।’
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে বিষয়টি দেখা হবে। যদি কেউ টাকা নিয়ে ঘর দিয়ে থাকে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের জায়গা আছে তাদেরকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে।’
More Stories
যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রির নামে প্রতারণা, তিনজন আটক I
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে গুরুতর জখম ছাত্র, থানায় মামলা