বাধ্য হয়ে যত দূর সম্ভব হেঁটে যাই, বাকিটা রিকশায়’
বাড্ডায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন আবদুর রহমান। ছেলেমেয়েদের পছন্দের স্কুলে পড়াশোনার জন্য থাকেন পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। করোনার আগে যানজট এড়াতে সকালে চলে যেতেন, ফিরতে হতো রাত।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন বন্ধের পর থেকে কর্মস্থলে যেতে তাঁকে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। বাসে রামপুরায় যেতে ২০-২৫ টাকা খরচ হতো, আর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বাস-অটোরিকশা বন্ধ থাকায় এতটা পথ রিকশাচালকেরাও যেতে চান না। রিকশা পরিবর্তন করে গেলেও আবদুর রহমানের যাওয়া–আসায় খরচ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।আবদুর রহমান বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে বেতনের সব টাকা শুধু যাতায়াতে খরচ হয়ে যাবে। এমনিতেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ এবং প্রতিদিনের বাজারের টাকার জোগান দিতে দেনা বেড়ে গেছে। তাই টাকা বাঁচাতে বাধ্য হয়ে যত দূর সম্ভব হেঁটে যাই, বাকিটা রিকশায় শেয়ার করে যাওয়া গেলে যাই।’
সরকারঘোষিত লকডাউনের কারণে গত সোমবার থেকে ঢাকায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবীদের কর্মস্থলে যেতে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরান ঢাকা, গুলিস্তান, নয়াপল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কর্মস্থলে ও জরুরি কাজে যেতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের ভিড়। রিকশাচালকেরা অটোরিকশার সমান ভাড়া চাচ্ছেন। এদিকে যাত্রীর তুলনায় রিকশার সংখ্যা কম।বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে বেরিয়েছিলেন সৈকত মাহমুদ। পল্টন মোড়ে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও ধানমন্ডিতে যাওয়ার রিকশা পাননি তাঁরা।
সৈকত মাহমুদ বলেন, মানুষ বেশি। যখনই কোনো ফাঁকা রিকশা আসছে, সবাই হুড়োহুড়ি শুরু করে দিচ্ছে। বাবাকে নিয়ে তো আর হুড়োহুড়ি করা সম্ভব নয়। দেখি কতক্ষণে রিকশা পাওয়া যায়, হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়।
অনেক জায়গায় মহানগর পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। তবে পুলিশের চেকপোস্টের কাছাকাছি এসে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়।
দোকান বন্ধ করেও চলছে বিক্রি
বিধিনিষেধ অনুযায়ী সড়কের দুই পাশের দোকানগুলো বন্ধ। রাস্তায় তীব্র যানজট। রিকশা ও পণ্যবাহী পরিবহন চলার পথ নেই। এদিকে প্রতিটি মার্কেটের প্রধান ফটকগুলো খোলা, আর ফুটপাতের ওপর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে মালিক ও কর্মচারীরা। পরিচিত ক্রেতা এসে মালিক-কর্মচারীদের পণ্যের বিষয় জানাচ্ছেন। টাকা দিয়ে পণ্য নিয়ে চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
এই দৃশ্য পুরান ঢাকার নবাবপুর রোডে। এমন অবস্থা ছিল পুরান ঢাকার অন্যান্য সড়ক ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতেও।বিধিনিষেধের মধ্যে এভাবে বেচাবিক্রির পক্ষে যুক্তি হিসেবে সংসার চালানো এবং দোকানভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন দিতে ঝুঁকি নেওয়ার কথা বলেন ক্রেতা–বিক্রেতারা।
More Stories
যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রির নামে প্রতারণা, তিনজন আটক I
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে গুরুতর জখম ছাত্র, থানায় মামলা