সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৩১ শিশু আত্মহত্যা করে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, কভিড-১৯ মহামারি শিশুদের মানসিক ট্রমাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১১ হাজার ৩৯৬ শিশু আত্মহত্যাজনিত কারণে মারা গেছে। এটি ২০১৯ সালে ঘটা এ ধরনের ৯৬১৩টি মৃত্যুর থেকে ১৮ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৯৪১৩টি থেকে ২১ শতাংশ বেশি।
পারিবারিক সমস্যা (৪০০৬), প্রেমঘটিত (১৩৩৭) ও অসুখ (১৩২৭) ছিল শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সী) আত্মহত্যার প্রধান কারণ। এ ছাড়াও ছিল মতাদর্শগত কারণ বা বীর পূজা, বেকারত্ব, দেউলিয়াত্ব, পুরুষত্বহীনতা বা বন্ধ্যাত্ব এবং মাদকাসক্তি কিছু শিশুর আত্মহত্যার পেছনে দায়ী ছিল।
ভারতের সেভ দ্য চিলড্রেন প্রোগ্রামের শিশু সুরক্ষা বিভাগের উপপরিচালক প্রভাত কুমার প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেন, কভিড-১৯ এবং এর ফলে স্কুল বন্ধ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং প্রবীণদের মধ্যে উদ্বেগ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাটি আরো বাড়িয়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে এটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। যদিও আমরা সমাজ, শিক্ষা এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো বাস্তব বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন। তবুও মানসিক সুস্থতা বা মনো-সামাজিক সমর্থন প্রায়শই পিছিয়ে যায়। শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার সংখ্যা একটি পদ্ধতিগত ব্যর্থতাকে প্রতিফলিত করে। পিতামাতা, পরিবার, প্রতিবেশী এবং সরকারের সম্মিলিত দায়িত্ব একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যেখানে শিশুরা তাদের সম্ভাবনা উপলব্ধি করতে পারবে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের নির্মাণ করতে সচেষ্ট হবে।
তিনি আরো বলেন, সেভ দ্য চিলড্রেন শিশু ও যুবকদের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক এবং সহায়ক ইকোসিস্টেম লালন করার জন্য একটি সম্মিলিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (সিআরওয়াই)-এর পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর প্রীতি মাহারা বলেছেন, মহামারির শুরু থেকেই এটি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সাইকোর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এমন একটি উদ্বেগ ছিল। সামাজিক সুস্থতা এবং সাম্প্রতিক ন্যাশনাল ক্রাইম সার্ভিস ব্যুরো ডাটা আসলে এই ভয়কে আন্ডারস্কোর করে যে মহামারিটি বাচ্চাদের মানসিক ট্রমাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলেছে।
পিটিআইকে তিনি বলেন, এনসিআরবি ডাটা জানাচ্ছে, ২০২০ সালে মোট ১১ হাজার ৩৯৬ শিশু আত্মহত্যা করে। এদের মধ্যে ছেলে শিশু পাঁচ হাজার ৩৯২ এবং মেয়ে শিশু ছয় হাজার চারজন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩১ শিশুর আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু ঘটে। অর্থাৎ প্রতিঘণ্টায় একজনেরও বেশি।
তিনি আরো বলেন, শিশুরা গৃহবন্দিত্ব এবং বন্ধু, শিক্ষক বা বিশ্বাসযোগ্য অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘসময় মিশতে না পেরে প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে গেছে। অনেকে তাদের প্রিয়জনের মৃত্যু দেখেছে। পারিবারিক স্তরে সংক্রামণের ভয় এবং গভীর আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। অনেক শিশু পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা এবং ফলাফলসম্পর্কিত বিশাল অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়েছে।
প্রীতি মাহারা বলেন, বিশাল সংখ্যক শিশু, বিশেষ করে যারা বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের ছায়ায় বসবাস করে, তারা অনলাইন ক্লাসে যোগদান করতে পারছিল না। তারা ডিজিটাল বিভাজনের দ্বারা প্রধানত প্রভাবিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে অন্য অনেকে ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত এক্সপোজারের শিকার হয়েছিল। হয়েছিল অনলাইন বুলিং ও অন্যান্য সাইবার-অপরাধের শিকার। এসব ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার সামগ্রিক উদ্বেগের সাথে যুক্ত। তাদের কোমল মনের জন্য অবশ্যই খুব বেশি সহ্য করা সম্ভব ছিল না।
সেন্টার ফর অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক অখিলা শিবাদাস বলেন, বিকল্প যত্ন এবং কাউন্সিলিং মডেলগুলো মূল স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় তৈরি করতে হবে। প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষাকে সমাজের বিভিন্ন অংশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পোদ্দার ফাউন্ডেশনের ম্যানেজিং ট্রাস্টি প্রকৃতি পোদ্দার বলেন, অভিভাবকদের অবশ্যই বুঝতে হবে তাদের সন্তানদের মানসিক সুস্থতা কতটা নাজুক। শিক্ষকদেরও মানসিক সমস্যার লক্ষণ এবং ধররগুলো শনাক্ত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। তাছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অবশ্যই মনোবৈজ্ঞানিক কাউন্সিলিং প্রোগ্রাম থাকতে হবে যাতে ছাত্ররা তাদের সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে পারে। প্রতিটি শিশুর মোকাবেলা করার পদ্ধতি আলাদা আলাদা। তাই, কাউন্সিলিং প্রোগ্রামগুলো অবশ্যই নমনীয় হতে হবে। প্রতিটি শিশুর প্রয়োজনগুলো পৃথকভাবে পূরণ করতে হবে। প্রয়োজন হলে একজন ছাত্রকে অবশ্যই সময়মতো একজন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞের নিকট রেফার করতে হবে।
সূত্র : এনডিটিভি
More Stories
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন, রাশিয়ার সেনাদের হামলায় দোনেৎস্কের বাখমুত শহরের পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হচ্ছে।
ভূমিকম্পের ২৯৬ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে শিশুসহ উদ্ধার ৩