23/12/2024

SkbTv Channel Bangla News

শাহাজানকে ফেলে দিয়েছিল মামারা মৃত ভেবে সীমান্তে

Spread the love

 কৈলাশহর হাসপাতালে প্রায় বছর খানেক চিকিৎসাধীন থাকার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন শাহাজান।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় জ্ঞান ফিরলে শাহাজান হাসপাতালের এক নার্সের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জানতে পারে শাহজাহান। পরে নার্সের মাধ্যমে দেশের বাড়িতে যোগাযোগ করেন।
পরবর্তীতে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন (আগরতলা ত্রিপুরা) আলোচনাক্রমে ২২ অক্টোবর শাহাজানকে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরপর ১৮ নভেম্বর দেশে ফিরে আসেন শাহাজান। দেশে ফিরে ৪ মামাকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করে। মামলা করার পরও ক্ষান্ত হয়নি শাহাজানের মামারা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী শাহাজান মিয়া অভিযোগ করে জানান, পারিবারিক অনেক বিষয় নিয়ে আমার বাবা ও মায়ের প্রায়শই ঝগড়া হতো। আমি বাবার পক্ষ নিয়ে কথা বলায় আমার মামারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। সেই আক্রোশের জেরে মামা ফুরকানের নেতৃত্বে অন্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আমার মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে চাতলাপুর সীমান্তে ফেলে আসেন।
তিনি আরও বলেন, আমি বাবাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতাম। এখন আমার এক হাত ও এক কান নেই। আমি কিভাবে আমার বাকি জীবনটা পরিচালনা করবো। আমার জীবন এমন চরম দূর্বিসহ হয়ে উঠবে চিন্তাই করিনি। বিশেষ করে আমার মামারা এমন কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।
শাহাজানের ফুফু রুপজান বিবি জানান, শাহাজান খুবই শান্ত ও সহজ সরল প্রকৃতির ছেলে। পরিবারে ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। দেড় বছর আমরা তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। এখন সে তার মামাদের ভয়ে আমার বাড়িতে রয়েছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
শাহাজানের বাবা মানিক মিয়া জানান, তার ছেলে সুস্থ, সবলভাবে ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার কথা বলে তিন বছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়। দেড় বছর পর স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারি ছেলে ভারতে আছে। এখন সে সরকারের সহযোগিতায় দেশে ফিরেছে। আমার ছেলে ভয়ে বাড়িতে আসতে চায়নি, তাকে আমার বোনের বাড়িতে রেখেছি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত শাহাজানের মামা ওয়াছির মিয়া তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, শাহাজান একজন মানসিক ভারসাম্যহীন। ভারসাম্যহীন অবস্থায় পরিবারের সবার অগোচরে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথায় গেছে সেটা আমরা জানি না। আমরা কেন তাকে মারতে যাব, তৃতীয় পক্ষ কেউ আমাদের ফাঁসাতে এমন ষড়যন্ত্র করছে। প্রশাসন তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন করবে।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ রায় জানান, শাহাজান আমার কাছে আসলে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেই। আদালত থেকে নির্দেশনা আসলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ জানান, এ ঘটনায় আদালত থেকে তদন্তের কোনো নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ২৫ জানুয়ারি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কুলাউড়ার চাতলাপুর সীমান্ত থেকে হাত, কান এবং মাথার একাংশ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় শাহাজানকে উদ্ধার করে ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে আগরতলা মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে দুই দেশের হাইকমিশনের সহযোগিতায় ছয়জন প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এক হাত ও এক কান কাটা অবস্থায় শাহাজানকে ফিরে পায় তার পরিবার।

About The Author


Spread the love