রাজারহাটে বিভিন্ন ফার্মেসিতে কুড়িগ্রামের অবৈধভাবে চড়ামূল্যে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ভারত থেকে চোরাইপথে আসা টাপাল-১০০ মি.গ্রা. ও টাইডল ১০০ মি.গ্রা. নামের ব্যথানাশক ট্যাবলেট। মাদকসেবীদের কাছে এসব ট্যাবলেট হয়ে উঠছে জনপ্রিয়।
মাদকসেবীরা ইয়াবার পরিবর্তে নেশার জন্য ব্যবহার করছে ব্যথানাশক এসব ট্যাবলেট। ইয়াবার সঙ্গে মিল থাকার কারণে ইয়াবা সেবনকারীরা এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, ব্যথানাশক এসব ট্যাবলেট নেশা হিসাবে ব্যবহার করলে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি চক্র গোপনে ওইসব ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসির মালিকদের অতিমুনাফা লাভের লোভ দেখিয়ে বিক্রির জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। প্রশাসনের তৎপরতার কারণে ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন সুলভ মূল্য ও সহজলভ্য না হওয়ায় স্বল্প দামের এসব ব্যথানাশক ট্যাবলেট বর্তমানে মাদকসেবীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সেবনকারী জানান, আগে দেশের নামকরা ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেডের তৈরিকৃত টাপেন্টা ১০০ মি.গ্রা. ও হেলথকেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেডের তৈরি সিনটা ১০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট পুড়িয়ে নেশা করতেন তারা। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভিতে এ ট্যাবলেটটি দিয়ে নেশা করার সংবাদ প্রচার করা হলে সরকারি সিদ্ধান্তে টাপেন্ডাডল গ্রুপের ওষুধগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন।
তার পর বেশ কিছু দিন ট্যাবলেটগুলো না পাওয়ার কারণে নেশা করতে অসুবিধা হচ্ছিল তাদের। এদিকে প্রশাসনের তৎপরতার কারণে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনের দাম চড়া হওয়ায় তা কিনে নেশা করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বর্তমানে বাজারে আবার নতুন করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাইপথে আসা টাইডল ১০০ মি.গ্রা. ও টাপাল ১০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেটগুলো বাজারে পাওয়া যাওয়ায় সেগুলো দিয়ে নেশা করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের সান ফার্মাসিটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের উৎপাদনকৃত টাইডল ১০০ মি.গ্রা. ট্যাবলেট প্রতি ১০টির একটি পাতার মূল্য ভারতীয় টাকায় ২৬৭ টাকা ও এমএনএস ল্যাবরেটরিজ প্রাইভেট লিমিটেডের উৎপাদনকৃত টাপাল ১০০ মি.গ্রা. ১০টির একটি পাতার মূল্য ১৭৬ টাকা। কিন্তু রাজারহাট উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসিতে ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় প্রতিনিধিরা এসব ট্যাবলেট প্রতিটি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে আসছেন।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ব্যথানাশক এসব ট্যাবলেট যদি কেউ দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করে, তা হলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া স্নায়ুতিক দুর্বলতা ও কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
রাজারহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রাজু সরকার জানান, টাপেন্ডাডল নামক ওষুধগুলো মাদকের আওতায় নিয়ে সরকারিভাবে এর উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তার বিকল্প কোনো ট্যাবলেট বাজারে আছে তা আমার জানা নেই। যদি বিকল্প হিসাবে টাপেন্ডাডল গ্রুপের কোনো ট্যাবলেট রাজারহাট উপজেলায় কোথাও বিক্রি করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
More Stories
যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রির নামে প্রতারণা, তিনজন আটক I
এই পদত্যাগে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না: তথ্যমন্ত্রী
শিক্ষকের বেত্রাঘাতে গুরুতর জখম ছাত্র, থানায় মামলা