23/12/2024

SkbTv Channel Bangla News

শনাক্ত চারজনে একজন

Spread the love

প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় বুধবার আরও ১০ জেলাকে রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগের দুটিসহ এখন রেডজোনে আছে ১২ জেলা। এছাড়া মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ৩১ জেলাকে ইয়েলো জোনে রাখা হয়েছে।
অবশিষ্ট জেলাগুলো এখন পর্যন্ত স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এগুলো গ্রিন জোনেই আছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিভাগ বেশকিছু সুপারিশ ও নির্দেশনা জারি করেছে। কিন্তু খোদ রেড জোনের মানুষই এসব মানছেন না। এছাড়া ইয়েলো এবং গ্রিন জোনের মানুষও উপেক্ষা করছে স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা।
ফলে সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। বুধবার সংক্রমণের হার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ প্রতি চারজনে একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে দেশে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় উচ্চ, মধ্যম ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
১২ জানুয়ারি ঢাকা ও রাঙামাটিতে সংক্রমণের হার ১০ থেকে ১৯ শতাংশের মধ্যে থাকায় দুই জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। পাশাপাশি যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, নাটোর ও রংপুরকে হলুদ জোন বা মধ্যম ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়।
বাকি ৫৪ জেলাকে গ্রিন জোন বা নিু ঝুঁকির সবুজ জোন ঘোষণা করা হয়। রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু এর ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় এসে বুধবার আরও ১০ জেলাকে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রেড জোনের ১২ জেলায় আছে-ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, যশোর, লালমনিরহাট, গাজীপুর, পঞ্চগড় এবং খাগড়াছড়ি। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
ইয়োলো জোন অর্থাৎ মধ্যম পর্যায়ের ঝুঁকিতে আছে-শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, নাটোর, কক্সবাজার, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, বরিশাল, মাগুরা, জয়পুরহাট, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, শরীয়তপুর ও নড়াইল। এসব জেলায় শনাক্তের হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ।
গ্রিন জোনের জেলায় আছে-কুমিল্লা, চাঁদপুর, পাবনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, ভোলা, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বরগুনা, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও মেহেরপুর। এসব জেলার শনাক্তের হার শূন্য থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। তবে বান্দরবান জেলায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ হলেও একে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়নি। কারণ এ জেলায় খুব কম সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্তের এ হার পাওয়া গেছে।
এদিকে দৈনিক সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও সাড়ে ৯ হাজার মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। যা ১৩ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেছে ১২ জনের। দেশে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ২৫৪ জনের। মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ১৭৬ জনের।
বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে-সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জোরালো তেমন কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। উলটো স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের মতো পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যেমন-বাজারঘাট, গণপরিবহণে ব্যাপক জনসামগম, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, মেলা, সামাজিক ও ধর্মীয় সভা ছাড়াও হোটেল-রেস্তোরাঁ ও পর্যটন কেন্দ্র সবকিছুই স্বাভাবিক নিয়মে চলছে।
এতে জনস্বাস্থ্যবিদরা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তারা মনে করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শনাক্তের হার বিবেচনায় দেশের জেলাগুলোকে যে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকির জেলায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার গড়ে ১০ থেকে ১৯ শতাংশ। মাঝারি ঝুঁকির জেলাগুলোতে এ হার ৫ থেকে ৯ শতাংশ। আর যেসব জেলায় শনাক্ত ৫ শতাংশের কম, সেগুলো কম ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। এ হিসাবে বর্তমানে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে ১২ জেলা, মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ৩১ জেলা এবং বাকি জেলাগুলো স্বল্প ঝুঁকির এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
দেশে উচ্চ, মাঝারি ও স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে সর্বশেষ ১০ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি হলে তা রেড জোন বা লাল এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের বেশি হলে অধিকতর গাঢ় লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়।
এ ধারাবাহিকতায় বুধবার থেকে গত এক সপ্তাহে ঢাকায় করোনাভাইরাসের ৬২ হাজার ২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ হাজার ৪৩৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এ কারণে ঢাকাকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে ৬১ জেলায় শনাক্তের হার আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে, কমেছে তিন জেলায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে ঢাকায়, চট্টগ্রামে এ হার ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে রাঙামাটি জেলায়।
রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দিন দিন সংক্রমণ বাড়ছেই। আমার আশঙ্কা, একদিনে ৩০ থেকে ৫০ হাজারও শনাক্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, যদি আমরা যথেষ্ট পরিমাণে পরীক্ষা করি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির যুগান্তরকে বলেন, কোনো এলাকার রোগী শনাক্তের হার ১০ শতাংশের উপরে উঠলেই ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ঢাকা জেলায়।
কিন্তু শনাক্ত হার বৃদ্ধি অথবা কমলেই সেখানে বিধিনিষেধে অনুসরণে শিথিলভাব দেখানো ঠিক না। এজন্য চলমান বিধিনিষেধ প্রতিপালনের বাইরে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হয়নি। তবে প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্টদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। কারণ যে কোনো মুহূর্তে রেড জোন ঘোষণা আসতে পারে। ঝুঁকি ঘোষণার আগেই সবাইকে সচেতন হতে হবে। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যা আরও ভয়ংকর হতে পারে। তখন টিকা বা কোনো কিছুই কাজে আসবে না।

About The Author


Spread the love