30/09/2024

SkbTv Channel Bangla News

ভাইস চেয়ারম্যান রূপাকে জেলা আ.লীগ থেকে অব্যাহতি, প্রশ্নফাঁসে গ্রেফতার

Spread the love

ঢাকায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে গ্রেফতার হওয়া মাহবুবা নাসরীন রূপাকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে তার প্রাথমিক সদস্য পদ সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দুপচাঁচিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রূপা কখন ও কোথায় আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ পেয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই। তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রূপা গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি রোববার দিনভর বগুড়া শহর ও তার গ্রামের বাড়ি দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ব্যাপক আলোচিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ ইডেন কলেজ শাখার সাবেক যুগ্ম আহবায়ক, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রূপা দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত ভুঁইপুর গ্রামের মৃত আতাউর রহমানের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা আতাউর রহমান দীর্ঘদিন ঢাকায় বেসরকারি অফিসের নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করতেন। গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ঢাকায় বাবার কর্মস্থলে লেখাপড়া করেন। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।
গত ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি হঠাৎ করেই ঢাকা থেকে দুপচাঁচিয়ায় এসে ১৪ দল মনোনীত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামেন। পরে গত ২০১৯ সালের মার্চে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার পর এলাকায় তার পরিচিতি প্রকাশ পায়।
ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক পরিচয়ে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে মাঠে নামেন। সরকারি দলের পরিচয় দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীকে ডিঙ্গিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হবার কিছু দিনের মধ্যেই তার বাবা মারা যান। তারপর শুরু হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী পরিচয়ে বিভিন্ন দপ্তরে তার দাপট।
নির্বাচনে জিতে শপথ গ্রহণের পর উপজেলা পরিষদের প্রথম মিটিং এ তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ইশারায় উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ নির্বাচিত হন। তিনি ভুঁইপুর গ্রামে না থেকে চাচা দেলোয়ার হোসেনের গোবিন্দপুরের পালিমহেশপুর গ্রামে থাকতেন। চাচার বাড়িতে থেকেই তিনি আপন ভাই রকিবুল হাসান রকিকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদেরের সঙ্গে থাকা ছবি দেখিয়ে তিনি এলাকায় প্রভাব সৃষ্টি করেন। তার হস্তক্ষেপে হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি করা হয়েছে।
রূপার চাচা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ফোনে বলেন, নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ঢাকার জিরানীবাজার এলাকায় একজনের সঙ্গে রূপার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। বাবা-মা না থাকায় এবং ছোটবোন শিউলী স্বামীর বাড়িতে এবং ছোটভাই রকি ঢাকায় লেখাপড়ার কারণে মাঝে মধ্যেই রূপা আমার বাসায় অবস্থান করত। তার বিষয়ে খারাপ কোনো কিছুই আমি আগে শুনিনি।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুর রহমান জানান, মাহবুবা নাসরীন দুপচাঁচিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নন। তিনি কীভাবে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য হলেন তা জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, অপরাধ যেই করুক না কেন দল কোনো দায়িত্ব নেবে না।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রূপা পরিষদের সব কর্মসূচিতে সক্রিয়।
উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন হেলাল জানান, ভাইস চেয়ারম্যান রূপার পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়। এখানে কোনো জমিজমা বা চোখে পড়ার মতো কোনো সম্পদ নেই। বর্তমানে কালী মহেশপুর গ্রামের বাড়িতে আসা যাওয়া করেন।
তিনি বলেন, রূপা এলাকায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে দাপট দেখাতেন।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদে ঢাকায় সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুবা নাসরীন রূপা জড়িত থাকার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়েছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তার এহেন কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মাহবুবা নাসরীন রূপাকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। তবে রূপা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদ কোথায় পেয়েছেন সে প্রসঙ্গে দপ্তর সম্পাদক কিছু বলতে পারেননি।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, রূপা দলের প্রাথমিক সদস্য না হলেও উচ্চ মহলের চাপে তাকে জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য পদ দেওয়া হয়। রূপা অনেকের মতো এলাকায় ‘হাইব্রিড’নেতা হিসেবে পরিচিত।

About The Author


Spread the love