23/12/2024

SkbTv Channel Bangla News

শিক্ষামন্ত্রী শাবিপ্রবি ভিসিকে দুঃখ প্রকাশ করতে বললেন

Spread the love

দিনব্যাপী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানালেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের অপসারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সব বক্তব্য রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি তুলে ধরবেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতিই উপাচার্যের নিয়োগ বা অপসারণের সিদ্ধান্ত দেন। পরে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তিনি শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে উপস্থিত হয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে একই কথা বলেন। পরে শিক্ষামন্ত্রী ভিসির ভবনে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দুঃখপ্রকাশ করতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম।
শাবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ আরও বলেন, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। আর এ দিবসের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য শাবি উপাচার্যকে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এর আগে কড়া নিরাপত্তার সঙ্গে ভিসি ক্যাম্পাসে তার বাসভবন থেকে বের হয়ে গাড়ি যোগে অফিস কনফারেন্স রোমে পৌঁছান। মূলত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসহ ২৫ দিন পর তিনি তার বাসভবন থেকে বের হলেন। মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় তিনি স্বাভাবিকভাবেই তার গাড়িতে করে গিয়ে সভায় যোগ দেন। শুক্রবার সিলেট সার্কিট হাউজে চার ঘণ্টাব্যাপী শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনির বৈঠক হয় শাবিপ্রবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে। পরে সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে মন্ত্রী এই কথা জানান।
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের সব দাবি বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিও দ্রুত স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষে মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস থেকে রওনা দেন।
এর আগে বেলা ৩ টায় সিলেটের সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার আবেদীন বৈঠকে বসার আগে তাদের আট দফা দাবির কথা জানান।
সেগুলো হচ্ছে-উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।
যেখান থেকে আন্দোলন শুরু
গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক’শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। পরে পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন। বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি। ২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।
এরপর ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তুলে দেন। এরপর ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রক্টরের পদ থেকে বৃহস্পতিবার আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবির মধ্যে জহির উদ্দিন আহমদ ও আলমগীর কবীরের অপসারণও ছিল।

About The Author


Spread the love