30/09/2024

SkbTv Channel Bangla News

প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে কেন গ্যাস সিলিন্ডার

Spread the love

বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দিন দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও বাড়ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ।
গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা কারণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে এসব দুর্ঘটনা। সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা সেই গ্যাস থেকে আগুন ধরে যেতে পারে। অন্যদিকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর উচিত বাজারে সরবরাহের আগে অবশ্যই সিলিন্ডারগুলো তদারকি করা।চলতি বছর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট চারদিনে গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় সারাদেশে মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।এ সময় ২২ জন দগ্ধ হয়েছেন। সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লার পাগলায় ট্রাকের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সৃষ্ট আগুনে নারী ও শিশুসহ দগ্ধ ১০ জনের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। একই দিনে ময়মনসিংহের ভালুকায় বসতঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আপন ৩ ভাইবোনের মৃত্যু হয়েছে। আর মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কলাবাগানে একটি ক্যাফেটেরিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনে ৬ জন কর্মচারী দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অন্তত ছয়টি এলপিজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৬০ জন।
গড় হিসাবে দেখা যায়, প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও তিনটি করে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে রান্নাঘরে। এর বাইরে যানবাহনেও এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে আগুনের ঘটনা ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৮৯৪। অর্থাৎ দিনে গড়ে দু’টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ও সচেতনা বিষয়ে একাধিক গৃহিণীরা বলেন, দোকান থেকে আমরা গ্যাস সিলিন্ডার করে পর্যায়ক্রমে রিফিল করে তা ব্যবহার করি। এখন আমাদের ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো ভালো না খারাপ তা তো বুঝার উপায় নাই। দোকানদারদের কথাই আমাদের বিশ্বাস করতে হয়। গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, সারাদেশে প্রতিদিন গ্যাস লিকেজ হয়ে অনেক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে। আমরা ঘটনার পর্যবেক্ষণ করে দেখছি সচেতনতার অভাবে এসব ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষ গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে পারে না আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমরা সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান করছি।
দেশে বর্তমানে ৬০ লাখের বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। এ গ্রাহকের একটি বড় অংশই গ্রামাঞ্চলের। দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত দুই কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত এক বছরে এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৩২৩টি। এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ১৯০টি। পাশাপাশি দেশে সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করেছে দেশে নির্মিত ৩৫ লাখ ৮২৯টি এলপিজি সিলিন্ডার। কিন্তু এসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
এদিকে সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ সিএনজি সিলিন্ডার নিয়ে প্রায় দেড় লাখ যানবাহন চলাচল করছে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর গাড়িতে বসানো সিলিন্ডার পরীক্ষা করে বিস্ফোরক অধিদফতরে ঐ পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার গাড়ি নিয়মিত এই পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেয়।গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা বিষয়ে জানতে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক নায়েব আলীর সাড়া পাওয়া যায়নি।
গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা রোধে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সিলিন্ডার লিকেজের আগেই সতর্ক হতে হবে। সবার আগে যে বিষয়টি দেখতে হবে তা হচ্ছে, সিলিন্ডারের মেয়াদ আছে কি না। সিলিন্ডারের মেয়াদ দেখার পর এর সঙ্গে সংযুক্ত ভালভের মেয়াদও দেখতে হবে। সেখানে কোনো ছিদ্র আছে কি না, তাও যাচাই করতে হবে। মূলত এই দুই কারণে সিলিন্ডার থেকে লিকেজের কারণে আগুনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সিলিন্ডার রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা নির্ধারণ করা। রান্না শুরুর আগে ও শেষ হওয়ার পরে গৃহীত সতর্কতা এবং সিলিন্ডার রাখার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং রেগুলেটরসহ সিলিন্ডারের খুঁটিনাটি সব পরীক্ষা করে রান্নাঘরে যথাযথভাবে বাতাস আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
যদি কোন কারণে দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্তদের খোলা স্থানে নিয়ে যেতে হবে; যেখানে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে। অনেক সময় তাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে তাই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বিস্ফোরণের কারণে শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হলে সেখানে অন্তত বিশ মিনিট ধরে পানি ঢালতে হবে। গ্যাস কাপড়ে লাগলে কাপড় পাল্টে ফেলতে হবে। চোখে পানির ঝাপটা দিতে হবে। আগুনের কারণে গায়ে ফোসকা পড়লে তা টেনে না তুলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

About The Author


Spread the love