টিম হোটেল থেকে ফেরার সময় সহযাত্রী আরেকটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি ভর্ৎসনার সুরেই বললেন, দূর ভাই এটা কোনো কাজ হলো একটা ছবিও তুললাম না।
আসলেই তো। ছবির চেয়েও সুন্দর টিম হোটেল গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস খবরে গমগম করেছে। একই টেবিলে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের একটা ফ্রেম অমূল্য হতো।পেছনে লেক আর সবুজ মিলেমিশে সেই ছবিটা ফেসবুকের কাভার ফটোও করে রাখা যেত। কিন্তু কিছু মুহূর্তে মনে বিহ্বলতা ভর করে। অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বিস্মৃত থাকে।
সহকর্মীর আফসোস শুনে ২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরের কথা মনে পড়ে গেল। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামসংলগ্ন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পাঁচতারা মানের একাডেমিতে গেছি। তখন পিসিবির প্রধান নির্বাহী সাবেক ক্রিকেটার জাকির খান। সুদর্শন মানুষটি একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন, সংস্কারকাজ চলছিল। একটা আলমারির ভেতর থেকে ক্রিস্টালের একটি ট্রফি দেখিয়ে বললেন ওটা কী, জানো তো?’ না জানার কোনো কারণ নেই। ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এই ট্রফি হাতে ইমরান খানের অভিজাত হাসিমুখ পাকিস্তান ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন ছবি। অনুরোধ করলাম, ধরে দেখা যাবে? জাকির খান সহাস্যে অনুমতি দিলেন। সেই ট্রফি ইমরান খানের মতোই এক এক করে উঁচিয়ে ধরেছিলাম আমি এবং সঙ্গী কালের কণ্ঠের সাবেক উপসম্পাদক মোস্তফা মামুন। মোহাচ্ছন্ন আমরা বাইরে এসে একই আক্ষেপ করেছিলাম, ছবি তুলতে মনে ছিল না যে! যদিও আমার ল্যাপটপের ব্যাগে সস্তা একটা ক্যামেরা ছিল।
একই রকম মোহাচ্ছন্ন কয়েক ঘণ্টা এবার কেটেছে বাংলাদেশের টিম হোটেলেও। শুরুতে সেঞ্চুরিয়নে টিম হোটেলের একটি উপমা ব্যবহার না করলেই নয়—শিল্পীর তুলিতে আঁকা প্রকৃতির ছবি। সপরিবারে কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য স্বপ্নের ঠিকানা।
অথচ এই রিসোর্টের এক অতিথি পরিবার নিয়ে ঘোর উদ্বেগে। আর তাঁকে ঘিরে উদ্বিগ্ন পুরো বাংলাদেশ—সাকিব আল হাসান কি তবে তৃতীয় ওয়ানডে না খেলেই ফিরে যাচ্ছেন পরিবারের কাছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাতসকালে টিম হোটেলের সামনে ভিড় করেছেন ঢাকা থেকে যাওয়া টিভি সাংবাদিকরা। সঙ্গে ক্যামেরা আছে, তাই ভেতরে যাওয়া তাঁদের মানা। কিন্তু আমরা প্রিন্ট মিডিয়ার দুজন অবলীলায় ঢুকে যাই রিসোর্টে। সাকিবসংক্রান্ত ফার্স্ট হ্যান্ড ইমফরমেশনের খোঁজে।
দোতলা রিসোর্টের একটি অংশের পুরোটা বরাদ্দ হয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। কভিড পরিস্থিতির কারণে তামিম ইকবালদের জন্য খাবারের আলাদা হল রুমও আছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বলতে এটুকুই। সামনের আঁকাবাঁকা লেকের পারে ছাতার নিচে বসার জায়গা, যা দেখলে একটু জিরিয়ে নিতে মন চাইবেই। সেই ছাতার নিচে আবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের তিন অধিনায়ক, দুজন সাবেক এবং একজন বর্তমান। খালেদ মাহমুদ, হাবিবুল বাশার ও তামিম ইকবাল। সঙ্গে বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ এবং দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবাল।
সাকিবের খবর জানতে ক্রমাগত ফোন আসতে থাকে মাহমুদ, বাশার ও নাফিসের নম্বরে। কখনো বোর্ড সভাপতি, কখনো বা ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান। আর দেশ থেকে মিডিয়ার ফোন তো রয়েছেই। সাকিবের তৃতীয় ওয়ানডে খেলা নিয়ে আগের রাতেও কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু সকালেই ছড়িয়ে পড়ে তিনি সোমবার রাতেই ফিরছেন, যে খবর শুনে টিম ম্যানেজমেন্ট বিস্মিত। এমন কিছুর আঁচ তো তাঁরা পাননি। আবার একজন বাদে, সেই তাঁরাও একসময় বিশ্বাস করতে শুরু করেন, সাকিব বুঝি চলেই যাচ্ছেন। একমাত্র তামিম ইকবাল শুরু থেকেই বলছিলেন যে, সাকিব তৃতীয় ওয়ানডে না খেলে যাচ্ছেন না। শেষমেশ সেটিই সত্যি হয়েছে। কেন, কিভাবে এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, সেটি বলেননি তামিম। এমনকি সাকিবের থেকে যাওয়া নিয়েও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এরই মধ্যে দিনের দ্বিতীয় আকর্ষণ তাসকিন আহমেদ জিম করে যাওয়ার পথে উঁকি দিয়েছেন। আইপিএলের দল পেয়েও যেতে না পারার আফসোস ভুলে নতুন প্রতিজ্ঞার কথা শুনিয়ে গেছেন তিনি। একটু পর নিজের রুম থেকে বের হয়ে আসেন নুরুল হাসান। স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে যিনি কেপটাউনে টেস্ট দলের প্রস্তুতিতে অংশ নিতে পারেননি। গতকাল সকালে পৌঁছেছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। তার আগের দিন দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন নতুন ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডারমটও। তবে পুরো দলের ছুটি থাকায় জিম আর অবসরেই দিনটি কেটেছে ক্রিকেটারদের। এই অবসরের কোথাও দ্বিতীয় ম্যাচে হারের স্মৃতি ফিরে আসেনি। বরং দলসংশ্লিষ্টদের শরীরী ভাষায় আরেকটি সেঞ্চুরিয়ন জয়ের প্রত্যয়ই ফুটে বেরিয়েছে।
এই ডামাডোলে ছবি তোলার কথা মনে হয়নি। মনে করে দেখলাম, এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ছবি না তোলার জন্য মনে হতাশার কাঁটা খোঁচাচ্ছে! প্রথমটার কথা তো শুরুতেই লিখেছি।
More Stories
হারলে সিরিজ হাতছাড়া
প্রথম নারী রেফারি ফুটবলে
চারশর নিচে থামাতে চায় বাংলাদেশ